বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, হিজরী সনের প্রথম মাস মুহররম ইসলামের ইতিহাসে অনেক তাতপর্য বহন করে। বিশেষ করে মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরার দিন ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এই দিনেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ১০ জন নবী ও রাসুলকে বিভিন্ন নিয়ামত দান ও বিপদ মুসিবত থেকে রক্ষা করেছিলেন। আবার এই বেদনা বিদুর দিনটি মুসলিম জাহানকে বারবার শোকাহত করে। সেদিন কারবালার ময়দানে ইয়াজিদ বাহিনীর বর্বরতা ও মানবতার মুক্তিদুত মহানবী (সা:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন-এর শাহাদাতের ইতিহাস মুসলমানদের জন্য ত্যাগের এক অনন্য নজির স্থাপন করে। অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ইমাম হোসেন (রা.) সেদিনে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। সত্য ও ন্যায়ের জন্য তার এই আত্মত্যাগ মুসলিম মিল্লাত সহ সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ‘পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরোও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, এডভোকেট কামাল উদ্দিন, কামাল হোসেন, মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য দেলোয়ার হোসেন, আবু আব্দুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভেকেট আব্দুর রাজ্জাক প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
নুরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, সরকার দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করতেই সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশের মানুষের অধিকার হরণ করেছে। তাই দেশকে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসীবাদী শক্তির অপশাসন ও দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। কারবালার সুমহান ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল থেকে বাংলার জমিনে ইসালামী আন্দোলনকে বিজয়ী করার প্রচেষ্ঠা করতে হবে। সেইসাথে তিনি স্বৈরাচারি, ফ্যাসীবাদী ও অশুভ শক্তির মোকাবেলায় যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ১০ মহরম সারা বিশ্বে মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যময় দিন। এই দিনে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। যার কারণে সারা বিশ্বে এই দিনকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র আশুরার এই দিনেই ঘটেছিল কারবালার প্রান্তরে সেই হৃদয় বিদারক ঘটনা। অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইমাম হোসেন (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। এখনো ইয়াজিদ সীমাররা বেঁচে আছে, কারবালা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আজও কারবালার মতো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। ফোরাতের পানি এখনো মুসলমানদের রক্তে লাল হয়। আরাকান রাজ্যে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। নাফ নদী মুসলমানদের রক্তে লাল হচ্ছে। তাই সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার ও অবৈধ অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা। ৬১ হিজরীর ১০ই মোহাররম কারবালা প্রান্তরে রাসূল (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদাতে প্রত্যেক মুসলমান মর্মাহত হন। তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ও অন্যায় ও অসত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। এরই ধারাবাহিকতাই বাংলাদেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ত্যাগ ও কোরবানীর সর্বোচ্চ নজরানা পেশ করে গেছেন। তাই পবিত্র আশুরার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদেরকেও সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সিসাঢালা প্রাচীরের মতো অবিচল থাকতে হবে। তিনি পবিত্র আশুরার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহবান জানান।